শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

টি-শার্টের বিদ্যুৎ থেকে মোবাইল চার্জ!

টি-শার্টের সাহায্যে বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে তা দিয়ে এবার করা যাবে মুঠোফোন চার্জ! এমন সুবিধার সাধারণ টি-শার্টে বিদ্যুৎশক্তি জমা করে রাখার অভিনব উপায় আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব সাউথ ক্যারোলাইনার একদল বিজ্ঞানী। স্মার্টফোন আর ল্যাপটপ যখন সবার হাতের নাগালে চলে যাচ্ছে, তখন এসব যন্ত্রাংশ চার্জের বিষয়টিও জরুরি হয়ে পড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের গ্যাজেটগুলো বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটাতে নমনীয় ব্যাটারির প্রয়োজন হবে। আর এ সমস্যার সমাধান করতেই টি-শার্টে বিদ্যুৎশক্তি জমা করার এ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা করা হয়।
বিজ্ঞানী অধ্যাপক জিয়াওডং লি এবং লিহং বাওয়ের উদ্ভাবিত এ প্রক্রিয়ায় সাধারণ একটি টি-শার্টকে ফ্লুওরাইড সলিউশন দিয়ে ভেজানো হয়। গবেষণার বিষয়ে বিজ্ঞানীরা জানান, টি-শার্টটি অক্সিজেনশূন্য পরিবেশে উচ্চ তাপমাত্রায় শুকানো হয় এবং এর ফলে টি-শার্টটির তন্তুগুলো সেলুলোজ থেকে অ্যাকটিভেটেড কার্বনে পরিণত হলেও আগের মতোই নমনীয় থেকে যায়। টি-শার্টটির কয়েকটি সুতা ইলেকট্রোড হিসেবে ব্যবহার করে এটিকে ক্যাপাসিটরে পরিণত করা হয়।
এরপর টি-শার্টটির সুতাগুলোয় ম্যাঙ্গানিজ অক্সাইডের প্রলেপ দেওয়া হয় এবং এর ফলেই টি-শার্টটি একটি স্থিতিশীল সুপার ক্যাপাসিটরে পরিণত হয়। দারুণ সুবিধার সুপার ক্যাপাসিটরগুলোকে একত্র করে মুঠোফোনের মতো পোর্টেবল ইলেকট্রিক ডিভাইসসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় গ্যাজেটগুলোকে চার্জ করা সম্ভব। বিজ্ঞানীরা আরও জানান, সাধারণত আমরা এখন যে স্মার্ট ডিভাইসগুলো ব্যবহার করি, সেগুলোর ক্ষেত্রে চার্জ একটি বড় সমস্যা। এ সমস্যাটি দূর করার ক্ষেত্রে এ প্রযুক্তি দারুণ কার্যকরী।

কম্পিউটারের গতি বাড়ান

কম্পিউটারের Start থেকে Run এ ক্লিক করে msconfig লিখে ok করুন। এখন ডান পাশের Services এ ক্লিক করুন। যে প্রোগ্রামগুলো সবসময় কাজে লাগে না সেগুলোর বাম পাশ থেকে টিক চিহ্ন তুলে দিন।
এখন Startup এ ক্লিক করে বাম পাশের সবগুলো টিক চিহ্ন তুলে দিয়ে ok করুন। Restart চাইলে Restart দিন।

পিসি পুনরায় চালু হওয়া বন্ধ করুন

নানা কারণে পিসি পুনরায় চালু (রিস্টার্ট) হতে পারে। এর মধ্যে যেসব কারণ রয়েছে, সেগুলো ঠিক করার মাধ্যমে এ সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
অপারেটিং সিস্টেমের জটিলতা: অনেক সময় অপারেটিং সিস্টেমে জটিলতা দেখা দিলে বা অপারেটিং সিস্টেম ক্র্যাশ করলে পিসি রিস্টার্ট হয়। উইন্ডোজের ডিফল্ট সিস্টেমে অপারেটিং সিস্টেমে কোনো সমস্যা হলে পিসি রিস্টার্ট নেয়। ডিফল্ট সিস্টেম বন্ধ করতে মাই কম্পিউটারে ডান ক্লিক করে propertise থেকে Advanced tab/Startup and Recovery/Settings অপশনে যান। এখন System Failure অপশনের অন্তর্গত Automatically Restart অপশন থেকে টিক চিহ্ন উঠিয়ে Ok করুন।
ভাইরাসের আক্রমণ: বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসের কারণেও পিসি রিস্টার্ট নিতে পারে। এ জন্য পিসিতে সব সময় হালনাগাদ (আপডেট) অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। নিয়মিত রুটিন করে পিসি স্ক্যান করুন।
হার্ডওয়্যারের সমস্যা: নতুন কোনো হার্ডওয়্যার সংযুক্ত করলে এবং সেটি পিসির সঙ্গে অসামঞ্জস্য হলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। পুরোনো হার্ডওয়্যারের সংযোগে ত্রুটি দেখা দিলে পিসি অহেতুক রিস্টার্ট নিতে পারে। এ জন্য হার্ডওয়্যারের সংযোগস্থল চেক করে দেখুন, ঠিক আছে কি না।
নতুন প্রোগ্রাম ইনস্টলের কারণে: অনেক সময় কিছু সফটওয়্যার, গেমস ইনস্টল করার কারণে পিসি রিস্টার্ট নেয়। আপনার পিসির কনফিগারেশনের সঙ্গে যদি কাঙ্ক্ষিত সফটওয়্যার, গেমস সামঞ্জস্যপূর্ণ না হয়, তাহলে এ সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই বুঝেশুনে প্রোগ্রাম ইনস্টল করুন।
হার্ডডিস্কের ত্রুটি: হার্ডডিস্কে ত্রুটিপূর্ণ সমস্যা দেখা দিলে পিসি রিস্টার্ট নিতে পারে। ত্রুটির কারণে হার্ডডিস্ক ডেটা রিড করতে পারে না। এর ফলে পিসি হ্যাং অথবা রিস্টার্ট হতে পারে। এ জন্য হার্ডডিস্ক স্ক্যান করে ত্রুটিপূর্ণ স্থান (ব্যাড সেক্টর) চিহ্নিত করতে পারেন।

সাবানের ফেনায় ডিসপ্লে!

সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অব টোকিওর গবেষক ইয়োইচি ওচিআই এক ধরনের পাতলা ডিসপ্লে তৈরি করেছেন। আর এই পাতলা ডিসপ্লেটি তৈরি হয়েছে সোপ বাবল অর্থাৎ সাবানের ফেনা দিয়ে। মজার ব্যাপার হলো, দর্শকেরা শিগগিরই এই সাবানের ফেনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সিনেমাও দেখতে পারবে। শুধু তা-ই নয়, অন্যান্য ডিসপ্লের সঙ্গে নতুন উদ্ভাবিত এই ডিসপ্লেটির স্বচ্ছতা ও আলোর প্রতিফলনে অনেক পার্থক্যও রয়েছে। সিনেমা দেখার সময় ডিসপ্লেটি আলট্রাসনিক সাউন্ড ওয়েভ ব্যবহার করে পরিবর্তিত হয় এবং তা একটি ফ্ল্যাট বা থ্রিজি ইমেজ তৈরি করে।
ফেনার মিশ্রণ শিশুদের খেলনার চেয়ে অনেক বেশি জটিল হলেও এখন পর্যন্ত এর প্রধান উপাদান হচ্ছে সাবান। বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, এই সোপ বাবল বা সাবানের ফেনা প্রযুক্তির ডিসপ্লেটি বিশ্বের সবচেয়ে পাতলা ও স্বচ্ছ ডিসপ্লে। গবেষক দলের প্রধান ড. ওচিআই বলেন, ‘এটা খুবই সাধারণ জ্ঞান যে সাবানের ফেনা মূলত একটি মাইক্রো মেমব্রেন বা সূক্ষ্ম ঝিল্লি। ফলে এর ভেতর দিয়ে সহজেই আলো যেতে পারে এবং বিভিন্ন রঙের মাধ্যমে আলোর প্রতিফলন ঘটায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই ধরনের তরল ব্যবহার করে খুবই পাতলা এবং নমনীয় এই ডিসপ্লেটি তৈরি করা হয়েছে। যদিও ট্র্যাডিশনাল স্ক্রিন বা প্রথাগত পর্দা হয় অস্বচ্ছ কিন্তু নতুন এই সাবানের ফেনা প্রযুক্তির পর্দাটি হবে অনেক বেশি স্বচ্ছ এবং দেখা যাবে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিফলন।

বিচ্ছেদের পর কী হয় বিয়ের আংটি?

বিয়ের বন্ধনে আংটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সোনা বা রুপা যা দিয়েই তৈরি হোক না কেন, শোভা হিসেবে এতে হীরা বা স্ফটিক পাথর যা-ই থাক না কেন, দুটি হূদয়ের বিনি সুতোর বন্ধনের তাত্পর্য তুলে ধরে এই আংটি।
বিবাহিত জীবনে স্বামী-স্ত্রীর কাছে এই আংটির মাহাত্ম্য ও আদর থাকে জীবন ভর। এই আংটিকে জড়িয়ে থাকে অনেক মধুর স্মৃতি। তবে কখনো যদি কোনো কারণে দাম্পত্য জীবনের পাট চুকে যায়, তখন বাগদান বা বাসর রাতের অনেক আকাঙ্ক্ষার এই আংটি হয়ে যায় বেদনার স্মৃতি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা হয়ে যায় নিতান্ত এক অকিঞ্চিত্কর জিনিস।
হলিউড তারকা টম ক্রুজ ও কেটি হোমসের কথাই ধরা যাক। ধুমধাম করে বিয়ের বন্ধনে জড়ান তাঁরা। মেয়ে সুরিকে নিয়ে বেশ সুখে কাটছিল তাঁদের দিন। এখন সবই অতীত। সম্প্রতি হঠাত্ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন কেটি হোমস। দূরে থাকা টম ক্রুজ ওই সিদ্ধান্তে বেশ অবাক হন। কিন্তু কিছুতে আর জোড়া লাগেনি সেই সংসার।
কেটি হোমস যে বেশ ক্ষুব্ধ হয়ে বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, এর প্রমাণ মিলল বিচ্ছেদের পর। বিয়ের সেই আংটি ছাড়া ঘুরতে শুরু করেন তিনি। তাঁর এই আচরণের মধ্যে এমন একটা ব্যাপার ছিল—দেখো, তোমাকে ছাড়াই আমি ভালো থাকতে পারি।
এবার শোনা যাক বিখ্যাত গায়ক সিল ও হেইডি কুম দম্পতির কথা। বিচ্ছেদ ঘোষণার পর টেলিভিশন সাক্ষাত্কারে সিল বলেছিলেন, তাঁর জীবনে সাবেক স্ত্রী হেইডি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। হেইডিকে যে তিনি মনে রেখেছেন, এর স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে আংটিটি অনামিকায় রেখে দেন। এক মাস পরই দেখা গেল, সিল ও হেইডি বিয়ের আংটি খুলে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবেগের বশে তাঁরা কী পণ করেছিলেন, তা আর কারও মাথায় নেই।
বিচ্ছেদের সঙ্গে বিয়ের আংটি অনামিকায় পরা বা না পরায় কী এমন আসে যায়?—এই প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে নানা জনের নানা মত নিয়ে বিবিসি অনলাইনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে মাত্র ৩০ বছর বয়সে বিয়ে বিচ্ছেদ হওয়া ভার্জিনিয়া আয়রনসাইডের জীবনের গল্প তুলে ধরা হয়। বিয়ে বিচ্ছেদের পরও তিনি দীর্ঘদিন অনামিকায় ধারণ করেন বিয়ের আংটি। তাঁর ভাষায়, ‘আমি দ্রুত আমার নিজের সত্তায় ফিরে এসেছিলাম। তবে আংটিটি অনামিকায় ছিল। কারণ তা বেশ সুন্দর আর আমার হাতে বেশ মানিয়েছিল।’ তবে আংটিটি হারিয়ে গেলে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন ভার্জিনিয়া। এই কষ্ট সাবেক স্বামীর স্মৃতি হারিয়ে গেছে বলে নয়; বরং অনেক দিন ধরে আঙুলে পরে থাকা প্রিয় জিনিসটি আর নেই বলেই হয়েছিল।
বিয়ে বিচ্ছেদের পর অনামিকায় আংটি পরে থাকার সঙ্গে মনস্তাত্ত্বিক একটি ব্যাপার আছে বলে মনে করেন ভার্জিনিয়া। তাঁর মতে, এই আংটি পরে থাকা বা না থাকার মাধ্যমে আপনি ভবিষ্যত্ জীবন নিয়ে একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। আপনি অন্য কারও সঙ্গে নতুন করে জীবন সাজাবেন, নাকি একা একাই জীবনের বাকি পথ পাড়ি দেবেন—সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
অনেকে মনে করেন, বিয়ে বিচ্ছেদের পর বিয়ের আংটি হাতে পরে থাকলে পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে ভর করে। তখন আর নতুন করে জীবন নিয়ে ভাবার ইচ্ছা মানুষের হয় না। বরং স্মৃতিগুলো নিয়ে বেঁচে থাকার মধ্যেই মানুষ এক ধরনের তৃপ্তি পায়।
আবার অনেকে অনামিকায় আংটি রাখার পক্ষে নন। তাঁরা নতুন করে জীবনটাকে সাজাতে চান। সে ক্ষেত্রে পুরোনো স্মৃতি তাঁরা রাখতে চান না, পাছে পুরোনো কথা মনে পড়ে যায়!
অনেক নারী বিচ্ছেদের পরও তিনি যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন, তা সন্তানদের বোঝানোর জন্য অনামিকায় সাবেক স্বামীর দেওয়া আংটিটি পরে থাকেন।
মানব-মানবীর সম্পর্ক নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন জুডি জেমস। তাঁর মতে, তারকারা বিচ্ছেদের পর বিয়ের আংটি নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি খেলায় মাতেন। আংটিটি না পরে কেউ কেউ বোঝাতে চান, তিনি আর তাঁর অতীতের সঙ্গে নেই, এখন এগিয়ে যেতে চান শুধু সামনে। অনেক তারকা এই প্রত্যাশা নিয়ে আংটিটি দ্রুত খুলে ফেলেন, সামনের দিনগুলোতে হয়তো আরও ভালো কোনো জীবনসঙ্গী জুটবে।
জুডির মতে, অনেকে বিচ্ছেদের পরও আংটি অনামিকায় পরে থাকেন। কারণ তাঁরা অন্যকে জানাতে চান না আসলে তাঁর জীবনে কী হয়ে গেছে। আবার অনেকে বিষয়টিকে ফেসবুকে স্ট্যাটাস আপডেট করার মতো হালকা মনে করে। এই শ্রেণীর মানুষের কাছে ব্যাপারটা খুব হালকা। বিচ্ছেদের পর আংটি খুলে তাঁরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে ফেলেন যে তিনি ‘সিঙ্গেল’। মানুষ এখন তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপারকে আর ব্যক্তিগত রাখতে চায় না বলেই এমন আচরণ করেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ষাটে এসে এসএসসি পরীক্ষা

ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়, তা প্রমাণ করছেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার বরণডালি গ্রামের জামির হোসেন। ৬০ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আর ১০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর মতো। পরিবারের সবাই তাঁকে দিচ্ছেন উৎসাহ।
১৯৭৫ সালে অভাব-অনটন আর পারিবারিক প্রয়োজনে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় জামির হোসেনকে; ধরতে হয় সংসারের হাল। তিনি বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ৩৫ বছর পরে নাতি-পুতিদের লেখাপড়া করা দেখে তাঁর বাল্যকালের সঞ্চৃতি মনে পড়ে যায়। তিনি আবার লেখাপড়া করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ২০১১ সালে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (টিউটরিয়াল সেন্টার) এসএসসি কোর্সে ভর্তি হন। প্রথম সেমিস্টারে তিনি কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চুল-দাড়ি পেকে গেছে তাঁর। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল ছিল ইংরেজি পরীক্ষা।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথমেই হাসিমুখে বলেন, পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এরপর জানান, নিয়ম করে তিনি সন্ধ্যা থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কিন্তু বয়সের কারণে মনে রাখতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কেন আবার লেখাপড়া করছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হতো, জীবনে যদি একটি সনদ না থাকে তা হলে জীবনই বৃথা। ৩৫ বছর আগে লেখাপড়া না করতে পারার মনঃকষ্ট থেকে ফের শুরু করেছি। কেউ কেউ হাসে তাতে আমার কিছু যায়-আসে না।’ লেখাপড়া শুরুর আগে তিনি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা সবাই তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। বেশি উৎসাহ জোগাচ্ছেন স্ত্রী মোমতাজ বেগম।
মোমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী এ বয়সে লেখাপড়া করায় আমি গর্বিত। আমি তাঁর লেখাপড়ার জন্য সব সময় সহযোগিতা করি। তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যাব।’
জামির হোসেনের তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে লেখাপড়া করছেন। আছে নাতি-নাতনিরা। পরীক্ষা শেষে বাড়ি থেকে নিতে আসেন তাঁর এক আত্মীয় আবদুল বারেক। তিনি বলেন, ‘আমার ফুফা এ বয়সে লেখাপড়া করছেন। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে আমি তাঁকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি নিয়ে যাই।’ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বহিঃপরিদর্শক হিসেবে আসা যশোর সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অধ্যাপক সুলতান আহমেঞ্চদ বলেন, ‘আমি অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এমন বয়স্ক মানুষকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখিনি।’
কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিউটোরিয়াল কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘এটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’

বিদায় বলে দিলেন লি

ফাস্ট বোলারদের নিয়তিই অবশেষে মানতে হলো ব্রেট লিকে। ক্যারিয়ারজুড়ে লড়াই করেছেন চোটের সঙ্গে। চোটের সঙ্গে আপস করেই ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছেড়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেট। এবার চোটের কাছে চূড়ান্ত হার, বিদায় বলে দিলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিকেও। খসে পড়ল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের আরেকটি তারা। তবে এই সময়ের ক্রিকেটারদের ধারা মেনে শেষ 
হয়েও শেষ হচ্ছে না ক্রিকেট। খেলে যাবেন আইপিএল ও 
বিগ ব্যাশ।
ইচ্ছা ছিল সেপ্টেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বিদায় নেবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। কিন্তু ৭ জুলাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পায়ের পেশির চোট নিয়ে ফিরলেন দেশে। এই ৩৫ বছর বয়সে আর উৎসাহ পাননি চোটের সঙ্গে আরেক দফা লড়াইয়ের। কাল ঘরের মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জানিয়ে দিলেন বিদায়ের ঘোষণা, ‘চোট পেলে কিংবা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে নিজের সঙ্গে সবারই অনেক বোঝাপড়া হয়। গত দু-তিন দিন অনেক ভেবেছি। আজ সকালে ঘুম ভেঙেই মনে হলো বিদায় বলে দেওয়ার উপযুক্ত দিন আজই।’
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটা ঠিক আলোকিত থাকল না। মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না। দল ধবলধোলাই হলো চিরশত্রু ইংল্যান্ডের কাছে। ব্যক্তিগত অর্জনের একটা আক্ষেপও থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ওয়ানডে উইকেটশিকারির রেকর্ডটা একার করে নেওয়া হলো না। শেষ করলেন গ্লেন ম্যাকগ্রার সমান ৩৮০ উইকেট নিয়ে। ম্যাকগ্রার আরেকটি উইকেট আছে আবার বিশ্ব একাদশের হয়ে।
চাওয়ামতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেললে রেকর্ডটা অনায়াসেই নিজের হয়ে যেত। তবে ভেতর থেকে আর তাগিদ পাচ্ছিলেন না, ‘অসাধারণ এই পথচলা একসময় থামাতেই হতো। নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছিলাম, সময়টা হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু আজ সকালে মনে হলো যাওয়ার সময় এটাই। দলীয় আবহে থাকলে শারীরিক ও মানসিকভাবে শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত। সামনের দুই মাসে তাকিয়ে ভেতরের তাগিদটা অনুভব করছিলাম না। এই মনোভাব নিয়ে খেলে যাওয়া নিজের বা দলের প্রতি ন্যায্য হতো না। আর একটা সময় আসেই, যখন মনে হয় যথেষ্ট হয়েছে।’
গতির ঝড় তুলে ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, একদিক থেকে ভাবলে এটা বিস্ময়কর। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেছিলেন ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে। প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট, ক্রিকেট-বিশ্ব শুনেছিল নতুন গতি তারকার পদধ্বনি। এরপর সব ধরনের ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, পাশাপাশি ছিল চোটের সঙ্গে নিত্য লড়াই। গত দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্রিকেট-বিশ্বে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল শোয়েব আখতারের সঙ্গে তাঁর গতির লড়াই। শোয়েবের পর (১০০.২ মাইল) ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম বলটি বেরিয়েছে লির (৯৯.৯ মাইল) হাত থেকেই। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর ৭১৮ উইকেটের চেয়ে বেশি আছে মাত্র নয়জন বোলারের। গতির ঝড়, ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য, আবার গিটারে ঝংকার তোলা, সুদর্শন—সব মিলিয়ে ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পোস্টারবয়।
পিছু না ছাড়া চোট না থাকলে হয়তো আরও সমৃদ্ধ হতো ক্যারিয়ার। তবে বিদায়বেলায় এ নিয়ে আক্ষেপ করছেন না লি, ‘১৬ বছর ধরে (প্রথম শ্রেণীসহ) দেড় শ কিমি গতিতে বল করলে শরীরের ওপর দিয়ে অকল্পনীয় ঝড় যায়। এ জন্যই খুব সামান্য কজন এটা করতে পারে। খুব কঠিন, ফাস্ট বোলার হওয়া একটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না। অসাধারণ এই ক্যারিয়ার নিয়ে আমি খুশি, উপভোগ করেছি এর প্রতিটি মিনিট। শুরু হোক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।’ এএফপি, ওয়েবসাইট।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিনোদনদায়ী এই ক্রিকেটারের প্রতি ক্রিকেট-বিশ্বের শুভকামনাই থাকবে।