শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

বিদায় বলে দিলেন লি

ফাস্ট বোলারদের নিয়তিই অবশেষে মানতে হলো ব্রেট লিকে। ক্যারিয়ারজুড়ে লড়াই করেছেন চোটের সঙ্গে। চোটের সঙ্গে আপস করেই ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে ছেড়েছিলেন টেস্ট ক্রিকেট। এবার চোটের কাছে চূড়ান্ত হার, বিদায় বলে দিলেন ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিকেও। খসে পড়ল অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটের স্বর্ণযুগের আরেকটি তারা। তবে এই সময়ের ক্রিকেটারদের ধারা মেনে শেষ 
হয়েও শেষ হচ্ছে না ক্রিকেট। খেলে যাবেন আইপিএল ও 
বিগ ব্যাশ।
ইচ্ছা ছিল সেপ্টেম্বরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বিদায় নেবেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে। কিন্তু ৭ জুলাই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তৃতীয় ওয়ানডেতে পায়ের পেশির চোট নিয়ে ফিরলেন দেশে। এই ৩৫ বছর বয়সে আর উৎসাহ পাননি চোটের সঙ্গে আরেক দফা লড়াইয়ের। কাল ঘরের মাঠ সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে জানিয়ে দিলেন বিদায়ের ঘোষণা, ‘চোট পেলে কিংবা কঠিন পরিস্থিতিতে পড়লে নিজের সঙ্গে সবারই অনেক বোঝাপড়া হয়। গত দু-তিন দিন অনেক ভেবেছি। আজ সকালে ঘুম ভেঙেই মনে হলো বিদায় বলে দেওয়ার উপযুক্ত দিন আজই।’
বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের শেষটা ঠিক আলোকিত থাকল না। মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না। দল ধবলধোলাই হলো চিরশত্রু ইংল্যান্ডের কাছে। ব্যক্তিগত অর্জনের একটা আক্ষেপও থাকতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ ওয়ানডে উইকেটশিকারির রেকর্ডটা একার করে নেওয়া হলো না। শেষ করলেন গ্লেন ম্যাকগ্রার সমান ৩৮০ উইকেট নিয়ে। ম্যাকগ্রার আরেকটি উইকেট আছে আবার বিশ্ব একাদশের হয়ে।
চাওয়ামতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেললে রেকর্ডটা অনায়াসেই নিজের হয়ে যেত। তবে ভেতর থেকে আর তাগিদ পাচ্ছিলেন না, ‘অসাধারণ এই পথচলা একসময় থামাতেই হতো। নির্বাচকদের সঙ্গে কথা বলে ঠিক করেছিলাম, সময়টা হবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। কিন্তু আজ সকালে মনে হলো যাওয়ার সময় এটাই। দলীয় আবহে থাকলে শারীরিক ও মানসিকভাবে শতভাগ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকা উচিত। সামনের দুই মাসে তাকিয়ে ভেতরের তাগিদটা অনুভব করছিলাম না। এই মনোভাব নিয়ে খেলে যাওয়া নিজের বা দলের প্রতি ন্যায্য হতো না। আর একটা সময় আসেই, যখন মনে হয় যথেষ্ট হয়েছে।’
গতির ঝড় তুলে ১৩ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেছেন, একদিক থেকে ভাবলে এটা বিস্ময়কর। আন্তর্জাতিক আঙিনায় পা রেখেছিলেন ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষে বক্সিং ডে টেস্টে। প্রথম ইনিংসেই ৫ উইকেট, ক্রিকেট-বিশ্ব শুনেছিল নতুন গতি তারকার পদধ্বনি। এরপর সব ধরনের ক্রিকেটেই অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছেন ম্যাচের পর ম্যাচ, পাশাপাশি ছিল চোটের সঙ্গে নিত্য লড়াই। গত দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত ক্রিকেট-বিশ্বে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল শোয়েব আখতারের সঙ্গে তাঁর গতির লড়াই। শোয়েবের পর (১০০.২ মাইল) ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে দ্রুততম বলটি বেরিয়েছে লির (৯৯.৯ মাইল) হাত থেকেই। তিন সংস্করণ মিলিয়ে তাঁর ৭১৮ উইকেটের চেয়ে বেশি আছে মাত্র নয়জন বোলারের। গতির ঝড়, ম্যাচ জেতানোর সামর্থ্য, আবার গিটারে ঝংকার তোলা, সুদর্শন—সব মিলিয়ে ছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের পোস্টারবয়।
পিছু না ছাড়া চোট না থাকলে হয়তো আরও সমৃদ্ধ হতো ক্যারিয়ার। তবে বিদায়বেলায় এ নিয়ে আক্ষেপ করছেন না লি, ‘১৬ বছর ধরে (প্রথম শ্রেণীসহ) দেড় শ কিমি গতিতে বল করলে শরীরের ওপর দিয়ে অকল্পনীয় ঝড় যায়। এ জন্যই খুব সামান্য কজন এটা করতে পারে। খুব কঠিন, ফাস্ট বোলার হওয়া একটা পাগলামি ছাড়া কিছুই না। অসাধারণ এই ক্যারিয়ার নিয়ে আমি খুশি, উপভোগ করেছি এর প্রতিটি মিনিট। শুরু হোক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়।’ এএফপি, ওয়েবসাইট।
দ্বিতীয় অধ্যায়ে বিনোদনদায়ী এই ক্রিকেটারের প্রতি ক্রিকেট-বিশ্বের শুভকামনাই থাকবে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন