শনিবার, ১৪ জুলাই, ২০১২

ষাটে এসে এসএসসি পরীক্ষা

ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনো বাধা নয়, তা প্রমাণ করছেন যশোরের কেশবপুর উপজেলার বরণডালি গ্রামের জামির হোসেন। ৬০ বছর বয়সে তিনি এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন আর ১০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর মতো। পরিবারের সবাই তাঁকে দিচ্ছেন উৎসাহ।
১৯৭৫ সালে অভাব-অনটন আর পারিবারিক প্রয়োজনে লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় জামির হোসেনকে; ধরতে হয় সংসারের হাল। তিনি বেগমপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ৩৫ বছর পরে নাতি-পুতিদের লেখাপড়া করা দেখে তাঁর বাল্যকালের সঞ্চৃতি মনে পড়ে যায়। তিনি আবার লেখাপড়া করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ২০১১ সালে তিনি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যায়ের অধীনে পাঁজিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (টিউটরিয়াল সেন্টার) এসএসসি কোর্সে ভর্তি হন। প্রথম সেমিস্টারে তিনি কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল শুক্রবার ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, চুল-দাড়ি পেকে গেছে তাঁর। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বসে পরীক্ষা দিচ্ছেন। গতকাল ছিল ইংরেজি পরীক্ষা।
পরীক্ষা শেষে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। প্রথমেই হাসিমুখে বলেন, পরীক্ষা ভালো হয়েছে। এরপর জানান, নিয়ম করে তিনি সন্ধ্যা থেকে রাত ১১-১২টা পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। কিন্তু বয়সের কারণে মনে রাখতে একটু কষ্ট হচ্ছে। কেন আবার লেখাপড়া করছেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হতো, জীবনে যদি একটি সনদ না থাকে তা হলে জীবনই বৃথা। ৩৫ বছর আগে লেখাপড়া না করতে পারার মনঃকষ্ট থেকে ফের শুরু করেছি। কেউ কেউ হাসে তাতে আমার কিছু যায়-আসে না।’ লেখাপড়া শুরুর আগে তিনি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তাঁরা সবাই তাঁকে উৎসাহ দিয়েছেন। বেশি উৎসাহ জোগাচ্ছেন স্ত্রী মোমতাজ বেগম।
মোমতাজ বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী এ বয়সে লেখাপড়া করায় আমি গর্বিত। আমি তাঁর লেখাপড়ার জন্য সব সময় সহযোগিতা করি। তাঁকে উৎসাহ দিয়ে যাব।’
জামির হোসেনের তিন ছেলে দুই মেয়ে। বড় ছেলে কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ে লেখাপড়া করছেন। আছে নাতি-নাতনিরা। পরীক্ষা শেষে বাড়ি থেকে নিতে আসেন তাঁর এক আত্মীয় আবদুল বারেক। তিনি বলেন, ‘আমার ফুফা এ বয়সে লেখাপড়া করছেন। আমরা একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছি। পরীক্ষার কেন্দ্র থেকে আমি তাঁকে মোটরসাইকেলে করে বাড়ি নিয়ে যাই।’ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি বহিঃপরিদর্শক হিসেবে আসা যশোর সরকারি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অধ্যাপক সুলতান আহমেঞ্চদ বলেন, ‘আমি অনেক কেন্দ্রে পরীক্ষার দায়িত্ব পালন করেছি। কিন্তু এমন বয়স্ক মানুষকে পরীক্ষায় অংশ নিতে দেখিনি।’
কেশবপুর পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ টিউটোরিয়াল কেন্দ্রের সচিব মশিউর রহমান বলেন, ‘এটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।’

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন